Posts

দ্রোহকাল: জীবন চরকি পাকের মতো আবর্তিত হয়  কার্নিভাল থেকে দ্রোহকালের মাঝে  অনিশ্চয়তার ডানা মেলে  যৌবন রাজহাঁসের মতো মুক্ত খোঁজে   শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে, সকাল সাঁঝে  শীতের ঝরাপাতার সাথে উড়ে আসা  পলাশীর প্রান্তর, অস্ত্রাগার লুণ্ঠন  অনাদিকালের প্রতিবাদের ভাষা  নিংড়ে আনে কিটোন বডি অন্তারাত্মা দামামা তোলে ক্ষনে ক্ষণ ।   সোনালী স্বপ্নে ঘেরা তারুণ্যের মায়াজাল আশ্বিনের বিসর্জনের ঢাক গুড়গুড় তাল একশো তেষট্টি ধারা, রুদ্ব কারা    আমার দূর্গার আজ রনং দেহি সারা।    
অপ্রকৃত বাস্তবতা ও বসন্ত: এ আই অ্যালগরিদম এ ফিরে পাওয়া     ছৌ মুখোশ পরিহিত কিছু পরিচিত মুখ ফাগুন আগুন হয়ে বিলীয়মান মুহূর্তের খুঁটিনাটি  আয়নার প্রতিবিম্বে ইট কাঠ পাথর কুয়াশায় ঝুলে থাকা বিষন্ন বিকেলবেলা সেলফির আমি, আসল নকলের সংজ্ঞা  মস্তিষ্কের গভীরতায় অপরিচিত ভাইরাস  সব, সব কিছুই এখন হাতের মুঠোয়।  আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি কল্পনার জগতে  পৃথিবী বিচ্ছিন্ন এক অপ্রকৃত বাস্তবতায়  বিলীয়মান শুন্যতায় ভেসে থাকা ফানুসে  অথবা ঝিমিয়ে যাওয়া এক বিলুপ্তপ্রায় সমাজে। দীর্ঘ শীত পাড়ি দিয়ে আনমনা মন  আলস্য ভাঙে এই বসন্তসন্ধ্যায় কল্পনা ছেড়ে আবার বাস্তবে ফিরে আসা   বাসন্তী শাড়ীতে তখন আলপনা, শঙ্খধ্বনি, ধূপের সুবাস।
কালীপুজোর রাত এলেই আলোয় রোশনাই এ ভরে ওঠে চারপাশ। আমরা বিশ্বাস করি, আলো দিয়ে শুধু অন্ধকার নয়, ভূতকেও দূরে সরানো যায়। বলা হয়, কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশীতে আমাদের বংশের পূর্বজরা নাকি ধরাতলে নেমে আসেন, একে একে সিঁড়ি বেয়ে। যদিও কেউ সেটা দেখেনি, তবু গল্পগুলো আমাদের কাছে পৌঁছেছে বাপ-ঠাকুর্দার মুখে মুখে। তাঁদের সময়েই এসব বিশ্বাস আর ভূতের গল্পের রমরমা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়ে বয়স্করা শিশুদের ভয় মিশ্রিত মজার ভূতের গল্প শোনাতেন, আর ছোটরাও আনন্দের সাথে ডুব দিত সেই রূপকথার জগতে।  আমার বাবা খুব মজা করে ভূতের গল্প বলতে পারতেন, তাই ছোটদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। হরেক রকমের ভূতের সাথে অনায়াস দক্ষতায় হাস্যরস যোগ করতেন। গল্পের ঝুলিতে যেমন থাকতো ব্রহ্মদত্তি আর শাকচুন্নি, তেমনি থাকতো কিঙ্কেবুড়ো নামের (এক কাল্পনিক চরিত্র যিনি বেলগাছের মগডালে থাকতেন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ভূত রূপে) চরিত্রও। বাবা কিঙ্কেবুড়োর মাথায় বেল বেঁধে তাঁকে ছুটিয়ে মারতেন, যেন গল্পের সেই মুহূর্তগুলোতেই ভূত ভয় পেয়ে পালাচ্ছে। আর ঠিক ওই ছোটাছুটির পরের ঘটনাটা কখনো জানা যেত না, কারণ ভূতও ছুটছে আর বাবাও ছুটছে! আমাদের বেড়ে ওঠার সময়...
আমাদের বাড়ি কলকাতার কাছে এক মফস্বলে। ছিল গোলাভরা ধান, ছিল পুকুরে মাছ, ছিল একান্নবর্তী পরিবার আর ছিল আমাদের বাড়ির অধিষ্ঠাত্রী ঠাকুর শ্রী শ্রী নন্দ নন্দন মানে শ্রীকৃষ্ণের একটি রূপ। শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনামের কথা আমরা সকলেই জানি তারই মধ্যে একটি নাম আমাদের অধিষ্ঠাত্রী দেবতার। সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই বাঁদিকে আমাদের মস্ত ঠাকুরঘর আর সেই ঠাকুরঘর কে কেন্দ্র করেই আমাদের জীবন আবর্তিত হতো। বাবার ঘুম যখন ভাঙতো তখনো ভোরের আলো ঠিক মতো ফোটেনি, শিবের স্তোত্র পাঠ শুরু করতেন:   “নমানী শমিশানি নির্বাণ রূপম  নিজ নির্গুনং নির্বিকল্পং নিরীহঙ   বিভূম ব্যাপকং ব্রহ্ম বেদ স্বরুপম  চিদাকাশ ও মাকাশ বাসং ভজেহম”  আমরা তখন বিরক্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছি ভোরের আলো ফুটতে বেশ কিছুটা বাকি আছে কিন্তু বাবার ভ্রুক্ষেপ নেই উনি পাঠ করেই চলেছেন:  “চলচ্চিত্র গাত্রম চিদানন্দ মিত্রম   গলে রুদ্র মালং শ্মশানে বসন্তম  নমামী শম্ভূ, শিব শম্ভূ, শিব শম্ভূ”  গুরুগম্ভীর গলায় শিব স্তোত্র পাঠ করেই বাবা বিছানা থেকে উঠে পড়তেন আর ঠিক সেই সময়ই  পুরোহিত মশাই ঠাকুর ঘর...
পশ্চিমবঙ্গবাসীরা কলকাতার ডাক্তার এর খুন ও ধর্ষণ এর প্রতিবাদে এখন মধ্যযুগীয় অত্যাচারের শিকার। একদিকে  স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্রের পুলিশের মোকাবিলা করতে হচ্ছে আর অন্যদিকে শাসক দলের গুন্ডাদের। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে বস্তি, সে খাল পার হোক আর রেল লাইন হোক, লক্ষ লক্ষ যুবক যুবতীর কোনো কাজ নেই। তারা দিনে ক্লাব দখল করে নানাবিধ গুন্ডামি করে যেমন সেই কামারহাটির কেসটা যেখানে ক্লাবঘর সাজা ঘরে পরিণত হয়েছিল।  আর রাতে রাস্তা দখল করে যা ইচ্ছে তাই করে  এই প্রসঙ্গে বলি গত বছর শীতকালে কলকাতায় ছুটি কাটাতে গিয়ে সচক্ষে দেখা রাতের কলকাতার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। আমাদের বাড়িটা মেন রোড এর পাশে হবার দরুন একটু বেশি সরগরম থাকে সবসময়ই। আমার শোবার ঘর আবার রাস্তার পাশেই। রাতে ঘুমোতে যাবার সময় তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা, বাইরে উচ্চৈস্বরে কথা বলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি একদল ছেলে বছর কুড়ি কিংবা বাইশ হবে রাস্তার মাঝখানে গোল হয়ে বসে বোতল খুলছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্নাক্স এর প্যাকেট, গ্লাস ইত্যাদি। বাইকের ক্রমাগত যাওয়া আসা আর মদ্যপানরত ছেলেদের উল্লাসে ঘুমোনোর বারোটা বেজে গেছে ততক্ষন। ভলি...
 কলকাতার কাদম্বিনী: মায়ের চোখে সোনার মেয়ে  বিষন্নতায় আকাশ ছেয়ে কোন আঁধারে মুখ ঢাকলি কাদম্বিনী, কোথায় গেলি।  বাইরে তখন রাত তিনটে নামে সেমিনার রুমে, অকাতর ঘুমে প্রাগতৈহাসিক অন্ধকারে পশুদের আনাগোনা  ঘরে একা নির্ভয়া বঙ্গ ললনা।   সজাগ এক সিভিক ভলান্টিয়ার   করবে কখন তার শিকার  শুধুই কি তার  কে জানে তার সাথে আরও কার।  অবাধ তার আনাগোনা   ভোট টানা, হাসপাতালে রোগী আনা আসল না সে মুখোশধারী  ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দের ওটাই বাড়ি।    আর জি কর বর্ষার রক্তে অশ্রুতে লাল,   নিউজ চ্যানেল এ চিরাচরিত বাক্যবানের জাল  হাথরাস আর উন্নাও বুলি উপচায়  আমার দেশে তখন শুধুই শ্রাবন ঘনায়।  
পাহাড় জ্বলছে:  উদাসী দিগন্তে মন খারাপের দিনে,   একান্তে পাহাড় আজ লুকিয়েছে মুখ  কুয়াশার আড়ালে   পাইনের বনে সূর্যস্নাত সকালে।     দুই নিঃসঙ্গ পাহাড়ের মাঝে এক শীর্ণকায় নদী, নদী তাকে বলা যায় যদি, বালুকাবেলা চিরে ট্যাঙ্কার এর ঘর ঘর ডাকে হয়তো সে হারিয়েই যাবে কোনো এক ফাঁকে।   পাহাড়ের মাথায় তখন শুধুই গুঞ্জন  স্বর্গ নদী পাড়ি দিতে  আরও কত যোজন?  আরও কত দূরের টান    নদীর সাথে কলতান, মন ভোলানো স্বপ্ন রাজ্যে  গড়ব মোদের স্থান।       ছদ্মবেশী মায়া  দক্ষিণ গরম হাওয়া   ক্ষুৎপিপাসায় ক্লান্ত দেহ  বিষম শীর্ণকায়া,  মেঘের নিচেই লুকিয়ে ছিল  হিংসুটে রৌদ্র ছায়া।   হয়নি আমার পাহাড় দেখা রাত্রি যেমন কাঁটা, জানে শব্দভেদী ভাষা। রাত পোহালেই ফুটবে যে সেই  কঠোর কঠিন সূর্যশিখা।