পশ্চিমবঙ্গবাসীরা কলকাতার ডাক্তার এর খুন ও ধর্ষণ এর প্রতিবাদে এখন মধ্যযুগীয় অত্যাচারের শিকার। একদিকে  স্বৈরাচারী শাসনতন্ত্রের পুলিশের মোকাবিলা করতে হচ্ছে আর অন্যদিকে শাসক দলের গুন্ডাদের। কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে বস্তি, সে খাল পার হোক আর রেল লাইন হোক, লক্ষ লক্ষ যুবক যুবতীর কোনো কাজ নেই। তারা দিনে ক্লাব দখল করে নানাবিধ গুন্ডামি করে যেমন সেই কামারহাটির কেসটা যেখানে ক্লাবঘর সাজা ঘরে পরিণত হয়েছিল।  আর রাতে রাস্তা দখল করে যা ইচ্ছে তাই করে 

এই প্রসঙ্গে বলি গত বছর শীতকালে কলকাতায় ছুটি কাটাতে গিয়ে সচক্ষে দেখা রাতের কলকাতার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। আমাদের বাড়িটা মেন রোড এর পাশে হবার দরুন একটু বেশি সরগরম থাকে সবসময়ই। আমার শোবার ঘর আবার রাস্তার পাশেই। রাতে ঘুমোতে যাবার সময় তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা, বাইরে উচ্চৈস্বরে কথা বলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি একদল ছেলে বছর কুড়ি কিংবা বাইশ হবে রাস্তার মাঝখানে গোল হয়ে বসে বোতল খুলছে। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্নাক্স এর প্যাকেট, গ্লাস ইত্যাদি। বাইকের ক্রমাগত যাওয়া আসা আর মদ্যপানরত ছেলেদের উল্লাসে ঘুমোনোর বারোটা বেজে গেছে ততক্ষন। ভলিউম একটু কমিয়ে দিতে বলবো বলে দুঃসাহস করে দরজা খুলতেই ওদের নজর আমার ওপর পড়তেই মন্তব্য ভেসে আস্তে লাগলো 'নতুন এক কাকু এসেছে রে'। একজন তো আগ বাড়িয়ে বলেই ফেললো 'কাকু বোধ হয় ভাগ চাইছে রে। আমি বলেই ফেললাম ভাই তোমাদের চ্যাঁচামেচিতে ঘুমোনো যাচ্ছে না, কখন শেষ হবে। বারোটা অবধি একটু সহ্য করে নিন বলে একটু চুপ হয়ে গেলো/ ওমা পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবার তারস্বরে কথা শুরু। ভাবলাম কলকাতায় যখন এসেছি এদের মতন রাতজাগা নিশাচর হতে হবে কিছুদিন। কিন্তু বারোটা বেজে গেলো অপেক্ষা করছি এদের কথা আর শেষ হয় না। রাত যখন প্রায় দুটো বাজে আর থাকতে না পেরে প্রায় ধমকের  সুরে ছেলেগুলোকে বলতেই ব্যাপারটা হিতে বিপরীত হলো। একজন একটু বয়সে বড় মানে বড়জোর পচিশ হবে আমাকে নিচে নেমে আসতে বললো। আমি তখন রেগে উঠে পুলিশ ডাকবো বলতেই ওদের মধ্যে কেউ ইট ছুড়তে উদ্যত হলো। শুভ বুদ্ধির উদয় হলো সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করলাম আর সেই মুহূর্তে একটা ইট দরজায় পড়লো। ভাবলাম কিছু দিনের জন্যে কলকাতায় এসে ঝামেলায় কেন পড়ি তার চেয়ে কটা দিন একটু কম ঘুমোলেও চলবে। আর ওদের দিকটাও তো সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা উচিত। বস্তির এই ছেলেগুলো আমাদের মতন কোনো ভালো হোটেল এ যাবার সামর্থ নেই আর পার্কগুলোকেও রাতে বন্ধ করে রাখা হয়। বস্তির এই ছেলেরা যা পারে করুক। সুতরাং রাস্তাই একমাত্র আশ্রয়স্থল যেখানে মনের সুখে সুরাপান করে উল্লাস করা যায়।  

এ ব্যাপারে ওদের দোষ যতটা তার থেকে বহুগুন আমাদের রাজনীতিবিদদের যারা এই অভাগা রাজ্যে শিল্প আনতে দিলো না তার বদলে লক্ষীর ভান্ডার, ক্লাব অনুদান দিয়ে ভোটার কেনার সহজীকরণ করল। এই অভাগা রাজ্যে যে অভাগীরা ধর্ষিতা হবে এটাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা। তবে সব হতাশা কাটিয়ে আর জি কর কাণ্ডের পর গণজাগরণ দেখে মনে আশার আলো জাগায়। আমাদের মেয়েদের সময় এসেছে মা কালীর থেকে শক্তি অর্জন করা  'হে ভৈরব শক্তি দাও, ভক্ত প্রাণে চাহ' মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে অন্যায়ের সঙ্গে মোকাবিলা করা l ভয় নয় এবার ভয় দেখানোর পালা l কবিগুরু এক শতকেরও আগে লিখে গেছেন 'ওদের যতই আঁখি রক্ত হবে মোদের আঁখি ফুটবে'l এবার যেন সর্বশক্তি দিয়ে সৈরাচারী শাসন তন্ত্রের বিপক্ষে লড়াই করে সফল হতে পারি l 

Comments

Popular posts from this blog