Posts

যে বসন্ত চলে গেল: যে বসন্ত চলে গেল এক পশলার আবির সাজে এরিকা তাকে খুজেই পাবে ব্লাক ফরেস্ট টিউলিপ মাঝে। যে বসন্ত চলে গেল ঝরাপাতার সাথি হয়ে শিমুল পলাশ কাঙাল হল ফাগের শেষে মুক্তি পেয়ে। যে বসন্ত চলে গেল দোয়েল কোয়েল কুহু তানে দুরের মানুষ কাছে এল দখিন হাওয়ায় গানে গানে। যে বসন্ত চলে গেল মরিচিকার সপনো মায়ায় গভীর এক উপত্যকায় মিথেন গ্যাসের হৃদয় জলায়। যে বসন্ত চলে গেল বকুল গন্ধের বন্যাধারায় রঙ দে গেরুয়ায় মনের গহন আঙিনায়।
প্রকৃতির পটপরিবর্তন: হে রুদ্র বৈশাখ গ্রাস করেছ সুদুর বনানি হঠাৎই এক লেলিহান শিখা শুরু করলে এক সর্বনেশে খেলা পাহাড় থেকে পাহাড়ে, ধোঁয়া আর ছাই, বলে ফুসফুস চাই, হে বিধাতা কি তোমার অভিপ্রায় দংশিছে কেন অন্তরাত্মা হায়। জানি পটপরিবর্তনে প্রকৃতি হবে দয়াপরবশ কঠোরতা জন্ম দেবে করুন রসের পার্বতীর উদ্দাম জলোচ্ছাস সুর ধরে নেয় সত্যযুগের নাগ্গর এর অনন্ত সবুজ জুড়িয়ে দেয় শহুরে মন। পুরানের অভিধান খুলে শুনছি শিব পার্বতীর মনিহারা কথা আক্রোশে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা  ফুটন্ত কুন্ডের ওপর ঝাপসা ভালোবাসা। ভরসা থাকুক অনাদি অনন্তে,  ওম মন্ত্রে বদলে যাক জীবনের পরিভাষা।
আমার বাবার গল্প- ধর টিকি মার বেল: আমাদের বাড়ির অধিষ্ঠাত্রি দেবতা শ্রী শ্রী নন্দনন্দন জিউর। ঠাকুরঘরের দুই দিকে দুটো বিশাল বড় বড় মহিরুহ ছাতার মতন ঘিরে রেখেছে যার একটি বেলগাছ আর একটি সোনা রঙের চাঁপা গাছ। সেই বেলগাছ নিয়ে আমার আজকের গল্প।কিছুটা আমার আর অনেকটাই বাবার অবদান্। ছেলেবেলায় যখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে বেল পড়ার শব্দ পেতাম, খুব ইচ্ছা করত বেল কুড়িয়ে আনতে। কিন্তু বাবা অমাদের ব্রহ্মদত্তির ভয় দেখিয়ে সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন। আর মা বলতেন ঠাকুর না জাগা অব্দি ওখানে যেতে নেই। আমরা অপেখ ্খা করে থাকতাম কখন পুরোহিত আসবেন ও স্বর্নচাঁপা ফুল তুলতে তুলতে ঠাকুরকে ঘুম ভাঙাবেন "জাগহো বৃকভানু নন্দিনী ওঠো যুবরাজে"। আহা কি মধুর সেই কন্ঠস্বর যার সম্মোহনি শক্তি আমাদের সকাল সকাল ঠাকুরঘরের দিকে টেনে নিয়ে যেত। ঘন্টা বাজানো স্তব পাঠ করে প্রসাদের বাতাসা খেয়ে তবে বাড়িতে আসা। মোটামুটি এইভাবেই সকাল সুরু হত আমাদের্। এবার বাবার ব্রহ্মদত্তির গল্পে আসা যাক যেটা বড় হয়ে শুনেছি। আমার দাদুর সকালের প্রাতরাশ হল একটা আস্ত পাকা বেল আর যেটা উনি ঠাকুরঘরের পাশের বেলগাছ থেকে কাকডাকা ভোরে কুড়িয়ে পেতেন। একবার বাবা কা...
আমাদের দুপুরবেলা-ফলসাগাছের সাথে আমার অাগের দুটো গল্পের মুল চরিত্র ছিল দুটি গাছ বাঁশ ও বেল। এবারেও তার অন্যথা হবে না, গাছ অকৃপন হস্তে তার সুমিষ্ট ফল উজাড় করে দিত সে আম, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, সবেদা, দালিম অার কত কি। আর স্বর্নচাঁপা, গন্ধরাজ, বেল ফুল এর গন্ধে মাতোয়ারা করে রাখতো বাড়ির প্রাঙগন। মা বলতেন দরজা বন্ধ করে রাখ না হলে বেলফুলের উগ্র গন্ধে সাপ আসতে পারে।স্বর্নচাঁপা ফুল তোলার অধিকার ছিল কেবল পুরুত মশাইএর কারন এটা ছিল এক্কেবারে মন্দিরের ছাতে আর সেখানে আমাদের প্রবেশ নিষেধ। ভোরব েলা পুজোর আগে যখন উনি ফুল তুলতেন একটা সুমিষ্ট গন্ধে চতুর্দিক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হত।এছাড়াও গাছ তার রহস্যময়তা আর অাচ্ছাদন দিয়ে অামাদের ঘিরে রাখত। মনে পড়ে ঢিল মেরে অনেক চেষটা করে যদি একটা আম বা জামরুল মাটিতে পড়ত খুশির ঠিকানা থাকত না। সে খুশির কাছে পরিখ্খায় প্রথম হওয়া কিছুই নয়। এবারে আমাদের গল্পে ফেরা যাক। গ্রীষ্মাবকাস চলছে, লম্বা দুপুরবেলা। সকাল কেটে যেত আডডা মেরে, সাঁতার কেটে কিন্তু দুপুরবেলা। আমাদের ছিল এক ডানপিটে পিসি যদিও বয়সে অামাদের প্রায় সমান। দুপুর হলেই তারসাথে আমরা একছুট্টে বাড়ির পিছনের ফলসাগাছে হ...
সজনে গাছ ও এক বুড়ির কথা: গল্পের গরু গাছে ওঠে এটাই আমরা জানি কিন্তু সত্যি ঘটনার কাহিনি যে আমাকে গাছের মগডালে তুলে মই কেড়ে নেবে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে মন্দ লাগে না নিচের দুঃখ নিচে ফেলে এসে কিছুটা সময় কাঠবিড়ালি, কাঠপিপড়ে, চড়ুই, চন্দনা, ময়নাদের রাজত্বে ঢুকে যেতে। গাছটি যদিও ছিল আমাদের বাড়ির গন্ডির বাইরে কিন্তু তার আসল শাখাটি বিস্তার করেছে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্ধ্যে। আমাদের বাড়ির পিছনদিকে বসন্ত থেকে সারা গরমকাল হলুদ হয়ে থাকত তার ফুলে। আর বাবা যেদিন তাড়াতাড়ি কাজে বেরিয়ে য েতেন কলকাতায়, ওই ফুলের চচ্চরি মা চার ছেলেমেয়েদের জন্যে বানিয়ে রাখতেন ভাতের সাথে খাবার জন্যে। তার পরে আসত ডাঁটার সময়। তখন দুবেলা ডাঁটা চিবোতে চিবোতে প্রানান্তকর অবস্থা আর কি! এবার ঘটনায় আসা যাক। আগেই বলেছি গাছ্টা ফল ফুল জোগালেও ওটার আসল মালিক ছিল পাশের বাড়ির মানে এক বুড়ির। এক টালির চালের ঘরের মধ্ধ্যে ছিল তার জীবন বাঁধা। বুড়ির চুল থেকে নেমে আসা ঝুড়ি, দাওয়ায় খেতে খেতে মুড়ি যখন প্রবচন শুরু করত বুড়ি, আমরা তখন কি আর করি দরজায় খিল লাগিয়ে রাম নাম স্মরি। তা একদিন মা বলেছে দু চারটে ডাঁটা ছাত থেকে পেড়ে আনতে। হয়েছে কি ভোরবেলা ছাত...
আমার বাড়ির দুর্গাপুজাঃ আমাদের দেড়শত বছরের পুরোনো বাড়ির পুজোর পিছনে কিছু ঐতিহ্যপুর্ন তথ্য লুকিয়ে আছে। সেই সময়ে কলকাতায় সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারেই দুর্গাপুজার প্রচলন ছিলো যার জন্য গ্রামবাঙ্লার লোকেরা হীনমন্যতায় ভুগতেন। কথিত আছে আমাদের বাড়ির পুজো গ্রামবাঙ্লার লোকেদের মুখে হাসি ফোটানোর একটি প্র​য়াসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়।কিছু টুকরো ঘটনা নিয়ে আমার এই গল্প​। মনে প​ড়ে আমাদের পুজো মহালয়া থেকেই শুরু হ​য়ে যেত বিরাট ঠাকুর্দালানের মাঝে আর দাদুর পুজো শেষে রাতে এক বেলা খাওয়া।আমরা অঞ্জলি শেষ করে  যখন মুড়ি তেলেভাজা সমেত ভুরিভোজ করতাম মনে হত দাদুটা কি অদ্ভুত, কিছু না খেয়ে মানুষ কি করে বেঁচে থাকে। পরে অবশ্য সেই ভুল ভাঙে য্খন দেখি নব্বই বছর বয়সেও তিনি কিরকম কর্মঠ ছিলেন্। মনে পড়ে নবমীর মন্ত্রচ্চারনের সম​য় পুনরায় গমনায়চ বলা শেষে পুরুতমশায়ের কান্নায় বুঝে আসা কন্ঠ আর দুচোখ বেয়ে নেমে আসা জলের ধারা। এই জলতরঙগ না রুধিলে পুজো শেষ কি করে হবে সেই নিয়ে আমরা চিন্তায় প​ড়ে যেতাম। আর ভাবতাম একজন বয়স্ক লোক সকলের সামনে এমনভাবে চোখের জল ফেলছেন লজ্জা করছে না। পরে অবশ্য জেনেছি ভক্তি না থাকলে পুজো করা বৃথা। মনে প​ড়...
শ্রীকৃষ্নের রাসযাত্রা ও একটি রুপকথা: শ্রীকৃষ্নের রাসযাত্রা আমাদের বাড়ির এক বিরাট আকর্ষন ছিল। দুর্গাপুজায় যেমন আচার বিচার্, রীতি নীতি উপবাস করতে দিন কেটে যেত রাসযাত্রা ছিল তার বিপরিত। সকাল থেকে ঠাকুরের মন্দির সাজানো, প্যান্ডাল সাজানো শোলার হরেক রকমের পাখি আর কাগজের তৈরি চেন দিয়ে। রেলওয়ে স্টেশনে একটি প্রস্তর ফলকে "শ্রীশ্রী নন্দনন্দন জিউর এর রাসযাত্রা উপলখ্খ্যে এইখানে নামুন" লেখাটি আমাদের গর্বের বস্তু ছিল। আমাদের মাঠে যাত্রাপালা আর পাশের মিত্তিরদের মাঠে পুতুলনাচ আর খাবার দাবার জ িনিষ। সে এক দিন ছিল; জিলিপি ভাজা সুরু হলেই কে প্রথম জিলিপি আনতে পারবে সেই নিয়ে কাকাদের সাথে অঘোষিত প্রতিযোগিতা। আর পুতুল নাচের রহস্য সন্ধান করতে বেশ কয়েকটা বসন্ত পার হয়ে গেছে। এবার আসা যাক আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু সন্ধাবেলার প্রোগ্রাম এ। রাসপুজো শেষ হলে ঠাকুরনাচের তালে তালে অামাদের চৈতন্য মহাপ্রভু স্টাইল এ নাচ চলত একবার শ্যাম আর একবার রাধা কে কেন্দ্র করে। কখনো "শ্যাম নব বিশরো বামে" আবার কখনো বা "রাধে রাধে রাধে রাধে, শ্রীরাধে জয় রাধে রাধে"। কথায় আছে না ছোটো বেলার শেখা কখনো বৃথা যা...