আমার বাড়ির দুর্গাপুজাঃ
আমাদের দেড়শত বছরের পুরোনো বাড়ির পুজোর পিছনে কিছু ঐতিহ্যপুর্ন তথ্য লুকিয়ে আছে। সেই সময়ে কলকাতায় সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারেই দুর্গাপুজার প্রচলন ছিলো যার জন্য গ্রামবাঙ্লার লোকেরা হীনমন্যতায় ভুগতেন। কথিত আছে আমাদের বাড়ির পুজো গ্রামবাঙ্লার লোকেদের মুখে হাসি ফোটানোর একটি প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়।কিছু টুকরো ঘটনা নিয়ে আমার এই গল্প।
মনে পড়ে আমাদের পুজো মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যেত বিরাট ঠাকুর্দালানের মাঝে আর দাদুর পুজো শেষে রাতে এক বেলা খাওয়া।আমরা অঞ্জলি শেষ করে যখন মুড়ি তেলেভাজা সমেত ভুরিভোজ করতাম মনে হত দাদুটা কি অদ্ভুত, কিছু না খেয়ে মানুষ কি করে বেঁচে থাকে। পরে অবশ্য সেই ভুল ভাঙে য্খন দেখি নব্বই বছর বয়সেও তিনি কিরকম কর্মঠ ছিলেন্।
মনে পড়ে নবমীর মন্ত্রচ্চারনের সময় পুনরায় গমনায়চ বলা শেষে পুরুতমশায়ের কান্নায় বুঝে আসা কন্ঠ আর দুচোখ বেয়ে নেমে আসা জলের ধারা। এই জলতরঙগ না রুধিলে পুজো শেষ কি করে হবে সেই নিয়ে আমরা চিন্তায় পড়ে যেতাম। আর ভাবতাম একজন বয়স্ক লোক সকলের সামনে এমনভাবে চোখের জল ফেলছেন লজ্জা করছে না। পরে অবশ্য জেনেছি ভক্তি না থাকলে পুজো করা বৃথা।
মনে পড়ে দশমীর দিন ঠাকুর প্রদখ্খিন করে ঘুরে ঘুরে ভোরে ভোরে অঞ্জলি দেয়া আর দুপুর থেকেই ঠাকুরদালান থেকে প্রতিমা বার করার প্রস্তুতি। বড়দের মন বিষাদে ভারাক্রান্ত হলে কি হবে আমাদের আনন্দ দেখে কে। ঠাকুর বার করে বাঁশের পাটাতন তৈরি করে পুরো শহর ঘোরাতে হবে যে! যদিও সমস্ত কাজই প্রতিমাবাহকরা করত তবুও ঠাকুর যাবার সময় মাঝে মাঝে কাঁধ লাগানো আর গলা ফাটিয়ে বলা দুর্গা মাই কি, আসছে বছর আবার হবে এইসবের মাঝে পাওয়া আনন্দ কি কম। প্রতিমা বিসর্জন শেষ হলে বাড়ি বাড়ি মিষ্টি খেয়ে ত্রাহি ত্রাহি রব তখন আদেশ এল বড়দের যে পুরুতমশাএর বাড়িতে যেতে হবে। আবার এক প্রস্থ মিস্টি আর সর্বশেষে এল সেই স্পেশাল আইটেম সিদ্ধির সর্বত বড়দের জন্যে। আমরা ছোটরাই বা বাদ যাই কেন সেই মহাপ্রসাদ থেকে। সুতরাং আমাদের ভাগ্যেও অল্প হলেও জুটল। পেটভরা মিষ্টির পরে ওটা পরতেই বাড়ির সামনের বাঁশগাছ্টা রহস্যময়ী রমনীর মতন দোলা দিতে লাগল। ওটা কি নিতান্তই কোনো বাঁশগাছ্, কোনো কাল্পনিক নারী না রক্তমাংসে গড়া আমার প্রথম প্রেম।
Comments
Post a Comment