আমার বাবার গল্প- ধর টিকি মার বেল:
আমাদের বাড়ির অধিষ্ঠাত্রি দেবতা শ্রী শ্রী নন্দনন্দন জিউর। ঠাকুরঘরের দুই দিকে দুটো বিশাল বড় বড় মহিরুহ ছাতার মতন ঘিরে রেখেছে যার একটি বেলগাছ আর একটি সোনা রঙের চাঁপা গাছ। সেই বেলগাছ নিয়ে আমার আজকের গল্প।কিছুটা আমার আর অনেকটাই বাবার অবদান্।
ছেলেবেলায় যখন বিছানায় শুয়ে শুয়ে বেল পড়ার শব্দ পেতাম, খুব ইচ্ছা করত বেল কুড়িয়ে আনতে। কিন্তু বাবা অমাদের ব্রহ্মদত্তির ভয় দেখিয়ে সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছিলেন। আর মা বলতেন ঠাকুর না জাগা অব্দি ওখানে যেতে নেই। আমরা অপেখ্খা করে থাকতাম কখন পুরোহিত আসবেন ও স্বর্নচাঁপা ফুল তুলতে তুলতে ঠাকুরকে ঘুম ভাঙাবেন "জাগহো বৃকভানু নন্দিনী ওঠো যুবরাজে"। আহা কি মধুর সেই কন্ঠস্বর যার সম্মোহনি শক্তি আমাদের সকাল সকাল ঠাকুরঘরের দিকে টেনে নিয়ে যেত। ঘন্টা বাজানো স্তব পাঠ করে প্রসাদের বাতাসা খেয়ে তবে বাড়িতে আসা। মোটামুটি এইভাবেই সকাল সুরু হত আমাদের্।
এবার বাবার ব্রহ্মদত্তির গল্পে আসা যাক যেটা বড় হয়ে শুনেছি। আমার দাদুর সকালের প্রাতরাশ হল একটা আস্ত পাকা বেল আর যেটা উনি ঠাকুরঘরের পাশের বেলগাছ থেকে কাকডাকা ভোরে কুড়িয়ে পেতেন। একবার বাবা কাকার নজরে এল দাদু কথায় কথায় রাগ প্রকাশ করছেন। দিদিমার কাছ থেকে জানা গেল রাগের পেছনে আছে কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধি আর তার মুলে আছে পাকা বেল্। কয়েকদিন ধরে নাকি বেল পড়ার আওয়াজ পাচ্ছেন কিন্তু বেলের দেখা নেই। বেলের অন্তর্ধান রহস্যের কিনারা করতে বাবা আর এক কাকা টরচ হাতে অন্ধকারে বেলতলায়। প্রথমদিন আড়ালে থেকে এক চোরের দেখা পাওয়া গেল। কিন্তু উপযুক্ত শাস্তি দেবার প্লান করে পরের দিন একজন গাছে চড়ে রইলেন আর একজন একটু দুরে রইলেন্। চোর যেই না বেলগাছের নিচে এসেছে ওমনি বাবা গাছ থেকে একটা বেল ফেলেছে। চোর খুব খুশি; না চাইতেই জল মানে বেল অার কি। কিন্তু এবার বাবার নিশানা একেবারে ঠিক সোজা বেল পড়লো চোরের মাথায়। আর চোর বাবাজি এক্কেবারে বেহুস্। এবারে বাবারা কাছে এসে দেখে ওমা চোরের টিকিও আছে। দুষটুবুদ্ধি চাপল মাথায়- টিকির সাথে একটা আস্ত বেল বেধে দিয়ে গাছের আড়ালে অপেখ্খা করতে লাগল। হুঁশ আসার পর যেই না পালাতে যাবে বেলটা মাথায় অাঘাত করে সজোরে আর তখন গাছের আড়াল থেকে বাবা বলে উঠল "ধর টিকি মার বেল"। চোর তখন ভয়ে চিৎকার করে উঠল ওরে বাবারে ব্রহ্মদত্তি, আমায় বাঁচা আর আসছি না এখানে। এমন কত মনুষ্যকৃত সত্য ঘটনাই না আছে এই পৃথিবীতে।
Comments
Post a Comment