আমাদের দুপুরবেলা-ফলসাগাছের সাথে
আমার অাগের দুটো গল্পের মুল চরিত্র ছিল দুটি গাছ বাঁশ ও বেল। এবারেও তার অন্যথা হবে না, গাছ অকৃপন হস্তে তার সুমিষ্ট ফল উজাড় করে দিত সে আম, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, সবেদা, দালিম অার কত কি। আর স্বর্নচাঁপা, গন্ধরাজ, বেল ফুল এর গন্ধে মাতোয়ারা করে রাখতো বাড়ির প্রাঙগন। মা বলতেন দরজা বন্ধ করে রাখ না হলে বেলফুলের উগ্র গন্ধে সাপ আসতে পারে।স্বর্নচাঁপা ফুল তোলার অধিকার ছিল কেবল পুরুত মশাইএর কারন এটা ছিল এক্কেবারে মন্দিরের ছাতে আর সেখানে আমাদের প্রবেশ নিষেধ। ভোরবেলা পুজোর আগে যখন উনি ফুল তুলতেন একটা সুমিষ্ট গন্ধে চতুর্দিক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হত।এছাড়াও গাছ তার রহস্যময়তা আর অাচ্ছাদন দিয়ে অামাদের ঘিরে রাখত। মনে পড়ে ঢিল মেরে অনেক চেষটা করে যদি একটা আম বা জামরুল মাটিতে পড়ত খুশির ঠিকানা থাকত না। সে খুশির কাছে পরিখ্খায় প্রথম হওয়া কিছুই নয়।
এবারে আমাদের গল্পে ফেরা যাক। গ্রীষ্মাবকাস চলছে, লম্বা দুপুরবেলা। সকাল কেটে যেত আডডা মেরে, সাঁতার কেটে কিন্তু দুপুরবেলা। আমাদের ছিল এক ডানপিটে পিসি যদিও বয়সে অামাদের প্রায় সমান। দুপুর হলেই তারসাথে আমরা একছুট্টে বাড়ির পিছনের ফলসাগাছে হাজির। মজার কথা গাছটি দেখতে যেমন অতিকায় ফলটি ততধিক ছোটো। কিন্তু টক মিস্টি স্বাদে অন্য ফলকে হার মানায়। আমাদের গেছো পিশি ততখনে একটা মগডালে চরে বসে আছেন আর আমরা দুই ভাই ততধিক খ্খিপ্রতায় অন্য ডালগুলো থেকে ফলসা পকেটে পুরছি। এদিকে মা অামাদের দেখতে না পেয়ে চ্যাচ্যামেঁচি করে হুলুস্থুলু কান্ড বাধিয়ে ফলসাতলায় হাজির। আমাদের মগডালে দেখলে কি অবস্থা হবে সেই চিন্তা করে পিসির নির্দেশে আমরা পাতার আড়ালে এক্কেবারে স্থানুবৎ। কাকারা মাকে বলল পাশের বাড়িতে খেলতে গেছে নিশ্চয়। মা আর কি করেন ঘরেই ফিরে গেলেন। বিকেলে বাড়ি ফিরতেই প্রশ্ন কোথায় যে থাকিস সব, দাঁড়া আজকে রাতে বাবাকে সব বলে দেব। সারা দুপুর খালি টো টো। বাবাকে আমরা খুব ভয় পেতাম কখন যে বাইরে বের করে খিল দিয়ে দেবে তখন সারারাত বাইরে মশা সাপ এদের সাথে কাটাতে হবে। তখন আমি পকেট থেকে রসালো মিষ্টি ফলসা বার করে মার সাথে বন্ধুত্ত করতাম। মার মন কি অত সহজে মানতে চায়। হ্যাঁ রে তোরা গাছের মগ্ডালে চড়লি ঠিক দুপুর বেলা যদি ভুতে মারত ঠেলা তখন বুঝতিস্। আমরা সমস্সরে বলতাম "ভুত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি.."।
Comments
Post a Comment