গল্পগাছা: ছেলেবেলার ভূতের ছায়া আর রোদের গল্প
কলকাতার ধারে এক শান্ত শহরে,
আমার শৈশব কাটতো গাছে ঘেরা ঘরে।
যেথা একদিন গঙ্গা বইত নিরবধি,
আজ শুধুই পুকুর, জলধি স্মৃতি।
পুকুরের ধারে বাঁশবন থেমে,
রাত্রির আঁধারে রামনাম লেগে।
ভয় আর ছন্দ, ব্যাঙ আর ঝিঁঝিঁর সুর,
বর্ষা এলেই প্রকৃতি করত এক অদ্ভুত মূর।
মা বলতেন,
"ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি—
রাম-লক্ষণ সঙ্গে থাকে, ভয়টা আমার কি?"
তবু শাঁকচুন্নি যে মানে না সে কথা,
সে তো হাটে বসে, দেয় হঠাৎ ডাক-পাতা।
"ভোলা, মাছ রেখে যা!" — বাঁশে বসে সে হুঙ্কার দেয়,
ভোলা দৌড়ে পালায়, বউ নিয়ে যায় ঝাঁটা — জয়!
শাঁকচুন্নি তখন মাছ খেয়ে মহোৎসবে,
মগডালে দিবানিদ্রায় মিশে যায় আলো-ছায়াতে।
আর ছিল সেই রাতে বাজ পড়ার ধ্বনি,
বাঁশ পড়ে গিয়ে আবার যেন ফিরে চলি।
চিৎকারে ভেসে যাই পুরোহিতের বাড়ি,
লোকে বলে “আহা বাজের ভয়”,
কিন্তু আমি জানি কিছু ছিল বড্ড ভারি।
তারপর আসে দুপুরের গল্প — ফলসাগাছে ছায়া,
গ্রীষ্মের ছুটি, পিসি আর আমাদের গায়ে মাটির মায়া।
আমরা তিনজনে, সে আমি, দাদা আর গেছো পিসি,
ফলসাগাছের ডালে চড়ে চলত রসালো যুদ্ধ-নিষি।
ফলসা — ছোট্টো ফল, কিন্তু স্বাদে বিশাল,
টক-মিষ্টিতে যেন স্বর্গের চাল।
পিসি ওপরে, আমরা নিচে
গাছ যেন মায়ের মতো হাসে আমাদের পিছে।
মা ডাকেন, খোঁজেন ঘরে—
চিন্তায় পড়েন যদি গেছোদের দল ভূতে ধরে।
আমরা পাতার আড়ালে চুপ করে থাকি,
মা ফিরে যান, কিন্তু মনে ভয় রাখি।
বিকেলে ফিরলেই প্রশ্নের বান,
"তোরা সারাদিন কোথায় থাকিস, হুঁ জান?"
বাবাকে বলবে শুনে গা জ্বলে যায়,
তখন পকেট থেকে ফলসা বেরিয়ে আসে রসালো হায়!
মা রাগে বলেন, “গাছে চড়িস দুপুরবেলা,
যদি ভূতের ঠেলা পেতিস, বুঝতিস খেলা!”
আমরা মুচকি হেসে বলি গলা চড়িয়ে—
"ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি,
রাম-লক্ষণ পাশে আছে, ভয়টা আমার কি!"
আর দূরে কোথাও,
হীরক রাজার রাজ্যে বাজে সেই স্বপ্নবাঁশি,
"আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে..."
আমাদের ছেলেবেলা, আজও গাছে গাছে ভাসে।
Comments
Post a Comment