বর্ষণমুখর দিনের গল্প:
আমার বর্ষাকাল মানে নিজের চোখে
দেখা গ্রামবাংলার বর্ষাকাল। সেই
জল থৈ থৈ মাঠ,
পুকুর, কর্দলিপ্ত ফুটবলের বিকেল, জুঁই, বেল
এর গন্ধে মাতোয়ারা সন্ধা
আর ব্যাঙ এর ডাকে
সঘন গহন রাত্রি
প্রথম বর্ষনের পর থেকেই দেখতাম পুকুরের জল কতটা বাড়লো। জল যখন কানায় কানায় পরিপুর্ন হয়ে রাস্তায় উঠব উঠব করছে সেই পরিপুর্নতায় মনটা খুশিতে ভরে উঠতো। আর জলে ঝাঁপ দেবার জন্যে হন্যে হয়ে ঘড়ির দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকতাম কখন এগারোটা বাজবে। বৃষ্টিতে সাঁতার কাটার মজাই আলাদা যদিও ডুব সাঁতার ভাল করে না জানার জন্য জলের নিচের রাজ্যটা অধরাই রয়ে গেল। একবার হল কি, আমি তখন মাঝগঙগায় (আগে ছিল আদিগঙগা এখন মজে হয়েছে পুকুর কিন্তু গঙগা নাম রয়েই গেলো) হঠাৎই মনে হল কে যেন আমাকে টেনে জলের নিচে নিয়ে যাচ্ছে। একেই সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে, ঘাট ফাঁকা, কেই বা বাঁচাবে। কিছু আগে একটা জলঢোঁড়া সাপকে পাস দিয়ে সাঁতরে যেতে দেখেছি কিন্তু সে তো আমার থেকেও নিরীহ এক প্রজাতি। তবে কি জলের নিচের অজানা রাজ্য থেকে কোনো রহস্যময়ী প্রানী। প্রানপনে পা ছুঁড়তেই প্রানীটি আমাকে ছেড়ে দিল। কোনক্রমে আঁকুপাঁকু করে পাড়ে পৌঁছে দম পুনরুদ্ধার করছি এমন সময় পেছন থেকে অট্টহাসির শব্দ। চেয়ে দেখি আমার বন্ধু, নাম তার বোলতা যদিও বলার থেকে করাকেই বেশি পছন্দ করে এবং কখন যে অজান্তে ডুবসাঁতারে তার কাজ করে দিয়েছে।
পুকুর
থাকলে বাশবাগান থাকবেই আর দুটোর
মাঝামাঝি রাস্তা দিয়ে রাতে
একা হেঁটে যেতে অনেক
সাহসী লোককেও রাম নাম
জপতে দেখেছি। বিশেষত
বর্ষাকালে যখন পুকুর জলে
ভরে যেত আর একটানা
ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের
ডাকে প্রকৃতি এক আধিভৌতিক মায়াজাল
বিছিয়ে রাখত তখন ঘর
থেকেই সেই অনুভুতিগুলো নিতে
হত। অবশ্য
এর ব্যাতিক্রম ও হত এবং
তার সুবাদে কয়েকবার বিচিত্র
অভিজ্গতা লাভ করতে পেরেছি
এবার আর একটি ঘটনা বলি। আমাদের বাড়িতে দুর্গাঠাকুর বিসর্জনের পর রীতি ছিল সবাই দলবেঁধে পুরোহিতের বাড়ি সিদ্ধি খেতে যাওয়া। একবার আমি অন্য ঠাকুর বিসর্জন দেখতে গিয়ে দেরি হওয়ায় বাড়ির বড়রা চলে গেছেন্। বর্ষার রাত একটু বৃষ্টি পড়ছে, যদি না যাই সব আনন্দ মাটি। ওনাদের বাড়ি যেতে এক বিশাল বাঁশ গাছ ভরা জঙ্গল এর ভিতর দিয়ে যেতে হয়। যেইমাত্র ওখানে ঢুকেছি ওমনি বাজ পড়ার শব্দ আর একটা বাঁশ সজোরে আমার সামনে পড়লো আবার স্ব্স্থানে চলে গেল। আমি মাগো বলে চিৎকার করতে করতে এক্কেবারে পুরোহিত মশাইএর বাড়ির দোরগোরায়। অনেকেই বললো আহারে বাজ পড়ার শব্দে ছেলেটা কি ভয়টাই না পেয়েছে। ওকে একা একা আসতে দেওয়া মোটেই উচিত হয়নি। আমি আমার ছোট্টো বুদ্ধিতে সেদিন বুঝতে পারিনি ঘটনাগুলো কি সত্যি কাকতালীয় নাকি অন্য কোনো জগতের অস্তিত্বের আভাস ছিল। তবে এখন বুঝতে পারি যে তিনিই আপদে বিপদে বিশ্বাসী মানুষদের সঠিক পথ দেখাতেন।

Comments
Post a Comment