আমার প্রিয় আমগাছ:
আমগাছটা বড় রাস্তার পাশে আমাদের আর কাকাদের বাড়ির সীমানা চিহ্নিতকারী হিসাবে তার একমাথা ঝাঁকড়া চুল নিয়ে বিরাজমান ছিল। যেহেতু গাছটি সীমানায় অবস্থিত তার ফল মানে আমের অধিকার নিয়ে একটা অহম ভাব থাকতো। এক বাড়ির লোকে দু একটা আম পাড়লেই অন্য বাড়ি রনং দেহি মনোভাব নিয়ে তেড়ে যেত। মধ্যিখান থেকে লাভ হত পাড়ার ছেলেদের। দুপুরে সবাই যখন দিবানিদ্রায় মগ্ন তখন পাঁচিল পেরিয়ে গাছে চ​ড়ে কাজ শেষ মানে আমের দফারফা। কখনো আবার ইঁটবর্ষন হত রাস্তা থেকেই।
আমগাছের সাথে জড়িত একটি কাহিনি মনে পরলো। বাবা ডেইলি প্যাসেনজারি করে বাড়িফিরতে ফিরতে রাত গড়িয়ে যেত​। বাবা বাড়ি ফিরতেই মার অনুযোগ দুই ছেলে এত মারপিট করেছে যে বাড়িতে তিষ্টানো দায় হ​য়ে পড়েছে। যেহেতু বড়ো তাই দোষী সাব্যস্ত করে বাবা আমাকে বাইরে বের করে দরজায় খিল তুলে দিলেন। বাইরে তখন নিকষ অন্ধকার বোধ হ​য় অমাবস্যা হবে। এমন মিশকালো অন্ধকারে আমি আর সামনে সেই অতি পরিচিত আমগাছ। মনে হল যেন সে শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আছে আমার আসার অপেখ্খায়। তার সম্মোহনি শক্তি উপেখ্খা করতে পারলাম না। গাছে চ​ড়া বিদ্যা জানার জন্যে ওপরে মগডালে চড়তে অসুবিধা হল না। কি অদ্ভুত নিস্তব্ধ্তা, কি অপুর্ব শান্তি। নিকষ কালো বিদীর্ন করে জোনাকির আলো আর ঝিঁঝিঁপোকার ডাক। মাঝে মাঝে ভেসে আসা শেয়ালের ডাক একটু বেমানান মনে হলেও বেশ লাগছিল ওপর থেকে নিচের জগতকে দেখা। হঠাৎ বাবার ডাকে সম্বিৎ ফিরে এল​। চেয়ে দেখি বাবা মা আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে। মাথায় দুষ্টুবুদ্ধি চাপল। ভাবলাম এখনি রসভঙগ হতে দেব না। আরো ঘন হ​য়ে পাতার আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। টর্চ এর আলোয় অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে রেগেমেগে বাবা আবার দরজা বন্ধ করে দিলেন। ভাবলেন ছেলেটা নিশ্চয় পাঁচিল ডিঙিয়ে বন্ধুর বাড়ি চম্পট দিয়েছে।
ভেতর থেকে হাতা খুন্তির শব্দ ভেসে আসছে আর মনটা অভিমানে ভরে উঠছে। আমাকে বাদ দিয়ে কি করে বাবা মা খাবার তোড়জোড় করে। না ডাকলে খেতে যাবই না।এদিকে পেটের খিদে তখন জানান দিতে শুরু করেছে।উপায়ান্তর না দেখে গাছ থেকে নেমে আমি তখন একটা ইঁটের টুকরো দিয়ে দরজার সামনের দেয়ালে বড়ো ব​ড়ো হরফে লিখলাম "আর একবার ডাকিলেই খাইতে আসিব​"। দেখাই যাক কি হয় ভেবে আবার গাছে চ​ড়ে পরলাম। বাবা খেয়ে নিলেও মা তো মমতাম​য়ী। ছেলে না খেলে নিজের মুখে অন্ন দেবেন কি করে। সেজন্যে লন্ঠন হাতে সদর দরজা খুলেই চোখে পড়ল "আর একবার ডাকিলেই খাইতে আসিব​"।এবৎ সাথে সাথেই বহু প্রতিখ্খিত ডাক বাবু খেতে আয় আমিও খেতে পারছি না। ব্যাস একলাফে আমিও আমগাছ থেকে ঝুপ করে মাটিতে এবং একছুটে খাবার আসনে। জানিনা তখন আমগাছটি প্রিয়্জন বিচ্ছেদে শোক প্রকাশ করছিল কিনা।

Comments

Popular posts from this blog