সজনে গাছ ও এক বুড়ির কথা:


গল্পের গরু গাছে ওঠে এটাই আমরা জানি কিন্তু সত্যি ঘটনার কাহিনি যে আমাকে গাছের মগডালে তুলে মই কেড়ে নেবে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। তবে মন্দ লাগে না নিচের দুঃখ নিচে ফেলে এসে কিছুটা সময় কাঠবিড়ালি, কাঠপিপড়ে, চড়ুই, চন্দনা, ময়নাদের রাজত্বে ঢুকে যেতে।

গাছটি যদিও ছিল আমাদের বাড়ির গন্ডির বাইরে কিন্তু তার আসল শাখাটি বিস্তার করেছে অামাদের বাড়ির চৌহদ্দির মধ্ধ্যে। আমাদের বাড়ির পিছনদিকে বসন্ত থেকে সারা গরমকাল হলুদ হয়ে থাকত তার ফুলে। আর বাবা যেদিন তাড়াতাড়ি কাজে বেরিয়ে যেতেন কলকাতায়, ওই ফুলের চচ্চরি মা চার ছেলেমেয়েদের জন্যে বানিয়ে রাখতেন ভাতের সাথে খাবার জন্যে। তার পরে আসত ডাঁটার সময়। তখন দুবেলা ডাঁটা চিবোতে চিবোতে প্রানান্তকর অবস্থা আর কি!

এবার ঘটনায় আসা যাক। আগেই বলেছি গাছ্টা আমাদের ফল ফুল জোগালেও ওটার আসল মালিক ছিল পাশের বাড়ির এক বুড়ি। একচালার ঘরের মধ্যে ছিল তার জীবন বাঁধা। বুড়ির চুল থেকে নেমে আসা ঝুড়ি, দাওয়ায় খেতে খেতে মুড়ি যখন প্রবচন শুরু করত বুড়ি, আমরা তখন কি আর করি দরজায় খিল লাগিয়ে রাম নাম স্মরি। 

একদিন মা বলেছে দু চারটে ডাঁটা ছাত থেকে পেড়ে আনতে। হয়েছে কি ভোরবেলা ছাতে আঁকশি দিয়ে ডাঁটা যেই না টানা ওমনি ছোটো একটা শাখা মর্মরিয়ে পরলো বুড়ির টালির চালে। ব্যাস বুড়িকে আর পায় কে! কে আমার গাছে উঠেছে, এই হারামজাদারা আমি এখনও বেঁচে আছি। সাহস থাকলে সামনে আয়, দেখি কার ঘাড়ে কটা মাথা। পাড়ার লোকেদেরই সাহস হত না বুড়ির সামনে যাবার আর আমরা তো তখন অনেক ছোট, ভয়েতে সেঁধিয়ে যেতাম। বুড়ির আত্মার সাথে মনে হত অঙগাগিভাবে জড়িত ওই সজনে গাছ।

কিছুদিন বাদে বুড়ির মারা যাবার খবর কানে এল। আর সজনে গাছটাকেও কেমন যেন জৌলুসহীন মনে হল। যেন দুই হরিহর আত্মা একে অপরের বিরহে শোক প্রকাশ করছে। কাজের তাগিদে দেশ বিদেশ ঘুরে অনেক দিন বাদে এসে দেখি গাছটা আর নেই।মনে মনে ভাবলাম গাছেরও কি মানুষের মতন অবলম্বন দরকার হয় বয়সকালে। হয়ত আমার মতন আরো অনেকেই এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, শেয়ার করতে দোষ কি।

Comments

Popular posts from this blog