আমার ছেলেবেলার ভুতের কাহিনি:


আমার ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতার উপকন্ঠে এক ছোটো শহরে। এককালে অাদি গঙগা ওখান দিয়ে বয়ে যেত যেগুলো এখন ছোট ছোট পুকুর এ পরিনত। পুকুর থাকলে বাশবাগান থাকবেই আর দুটোর মাঝামাঝি রাস্তা দিয়ে রাতে একা হেঁটে যেতে অনেক সাহসী লোককেও রাম নাম জপতে দেখেছি।বিশেষত বর্ষাকালে যখন পুকুর জলে ভরে যেত আর একটানা ঝিঁঝিঁ পোকা আর ব্যাঙের ডাকে প্রকৃতি এক অাধিভৌতিক মায়াজাল বিছিয়ে রাখত তখন ঘর থেকেই সেই অনুভুতিগুলো নিতে হত। অবশ্য এর ব্যাতিক্রম ও হত এবং তার সুবাদে কয়েকবার বিচিত্র অভিজ্গতা লাভ করতে পেরেছি। সে কথায় পরে কখনো আসব।
মা আমাদের আরো একটা ছড়া শিখিয়েছিলেন, "ভুত অামার পুত, পেত্নি আমার ঝি, রাম লখ্খন সাথে আছে ভয়টা আমার কি"। ভুত পেত্নি তো তাড়ানো গেল কিন্তু শাঁক্চুন্নি, ব্রহ্মদত্তি এদের ত কেউ আমল দিল না। শাঁকচুন্নি আসলে অনেকটা ছিচকে চোরের মতন্। ছোটোখাটো বিপত্তি ঘটাত। এই তো ভর দুপুর বেলা ভোলা দোকান বন্ধ করে খেতে আসছে মাছের থলি হাতে। যেই না বাঁশবাগানের পাস দিয়ে আসতে গেছে অমনি মগ ডাল থেকে এক শাঁকচুন্নি বলল এই ভোলা মাছের থলেটা রেখে যা বলছি অনেকদিন না খেয়ে আছি। শোনামাত্রই ভোলা থলিটা রেখে একছুটে বাড়িতে গিয়ে সব জানিয়ে দিলে। ভোলার বৌ তো শুনেই ঝাঁটা হাতে চললো মাছের থলে উদ্ধার করতে। এত দিনের উপোষী শাঁকচুন্নি তখন মহাভোজ সেরে মহানন্দে মগডালে দিবানিদ্রা দিচ্ছে।
এবার আমার একটি ঘটনা বলি। আমাদের বাড়িতে দুর্গাঠাকুর বিসর্জনের পর রীতি ছিল সবাই দলবেঁধে পুরোহিতের বাড়ি ভাঙ খেতে যাওয়া। একবার আমি অন্য ঠাকুর বিসর্জন দেখতে গিয়ে দেরি হওয়ায় বাড়ির বড়রা চলে গেছেন্। বর্ষার রাত একটু বৃষ্টি পড়ছে, যদি না যাই সব আনন্দ মাটি। এই ভেবে রাম নাম করতে করতে বেরিয়ে পড়লাম। ওনাদের বাড়ি যেতে এক বিশাল বাঁশ গাছ ভরা জঙ্গল এর ভিতর দিয়ে যেতে হয়। যেইমাত্র ওখানে ঢুকেছি ওমনি বাজ পড়ার শব্দ আর একটা বাঁশ সজোরে আমার সামনে পড়লো আর কিছু মুহুর্ত অমন থাকার পর আবার স্ব্স্থানে চলে গেল। আমি মাগো বলে চিৎকার করতে করতে এক্কেবারে পুরোহিত মশাইএর বাড়ির দোরগোরায়। অনেকেই বললো আহারে বাজ পড়ার শব্দে ছেলেটা কি ভয়টাই না পেয়েছে। ওকে একা একা আসতে দেওয়া মোটেই উচিত হয়নি। আমি আমার ছোট্টো বুদ্ধিতে সেদিন বুঝতে পারিনি ব্যাপারটা কি সত্যি কাকতালীয় নাকি অন্য জগতের অস্তিত্বের আভাস ছিলi

Comments

Popular posts from this blog